সোনারগাঁ জার্নাল

দীর্ঘ ২৫ বছর পর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়াকে সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর ইউনিয়ণ পরিষদের চেয়ানম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সহ-সভাপতি করে কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, আমরা সংসদে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে নৌকা চাই।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য অ্যাড. মো. কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, সংসদ সদস্য সানজীদা খাতুন, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রমূখ।

এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন, মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণত সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণত সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, গত ১৩ বছর ধরে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা আর জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি এখন খাদের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোন রকমে তাদের নাকটা ভেসে আছে। এখনও যদি তারা সঠিক পথে না আসে, নির্বাচনে না আসে, মুক্তিযুদ্ধের-স্বাধীনতার চেতনা-আদর্শের রাজনীতি না করে, তাহলে ভেসে থাকা নাকটাও ডুবে যাবে। আর কোন দিন খাদ থেকে উঠতে পারবে না।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। তারা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেষ লড়াই, মরণপণ লড়াই এর হুমকি দিচ্ছেন। আমি বলতে চাই, এখন পর্যন্ত কোন লড়াইয়ে বিএনপি জিততে পারে নাই, ভবিষ্যতেও আর পারবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ লড়াইয়ে কখনও হারে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও হারে না।
বিএনপির উদ্দেশে মন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করুন। এছাড়া, ক্ষমতায় আসার দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই দলের খুঁটি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে কোন কোন্দল থাকলে তা ভুলে যেতে হবে। দলের আদর্শই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়। আমাদের শক্তি হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ ও সাহস। আর দলের নেতৃত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে আমাদের সকল নেতাকর্মীকে কাজ করতে হবে। তাহলে কোন শক্তিই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না। আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবে, ইনশাল্লাহ। আন্দোলন-সংগ্রামের জন্যও নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, যে কোন পরিস্থিতিতে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হোন। বিএনপি-জামায়াত যদি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে রাজপথে থেকে আমরা তা মোকাবেলা করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও আমরা সহযোগিতা করব।

মির্জা আজম বলেন, ২৫ বছর পর সোনারগাঁয়ে সম্মেলন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনেক তাৎপর্যপূর্ণ রয়েছে। দেশের ঐতিয্যবাহী জেলা নারায়ণগঞ্জ। এ জেলা দেশের অর্থনীতি অনেক ভূমিকা রাখে। সেজন্য আমরা গর্বিত। উপজেলা পর্যায়ে এমন সম্মেলন কমই দেখা যায়। সোনারগাঁয়ের মানুষ আওয়ামী লীগকে অনেক ভালোবাসে।

আমরা যদি একতাবদ্ধ থাকি তাহলে কেউ শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসে। তাহলে খুনি তারেক জিয়া ক্ষমতায় আসবে। শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা দেশের কি অবস্থা হবে বুঝেন তাহলে। আমরা ছিলাম ভিক্ষুকের জাতি। ১৩ বছরে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। ১৩বছর আগে যে পায়ে হাটতো সে আজ বাইসাইকেল চালায়।।।

২০২৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় না আসলে আমাদের অবস্থা ২০০১-২০০৬ সালের মতো হবে। শামীম ওসমানের মতো জনপ্রিয় নেতাও দেশে থাকতে পারে নাই। প্রকাশে তারা মেরে ফেলতো। আমাদের আহসান উল্লাহ মাষ্টারকে প্রকাশ্যে মেরে ফেলেছিল। তাই আমরা ভালো আছি সুখে আছি। আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। ২০২৪ সালের এ আসনে আমারা নৌকা মার্কা জয় করবো। আমরা আপনাদের পালস বুঝতে পারছি। আমি শেখ হাসিনাকে জানাবো আপনাদের প্রত্যাশার কথা। নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং করে নৌকা ঢুবাবেন না। এদেশে পদ বানিজ্য শুরু হয়েছে। দিন রাত পরিশ্রম করে উন্নয়নশীল দেশের পরিণত করেছে। সব জায়গাকে সমৃদ্ধি করেছেন।

আড়াই হাজার আসনের এমপি নজরুল ইসরাম বাবু বলেন, আওয়ামী লীগ সোনারগাঁ আজ ঐক্যবদ্ধ। হাসনাত পরিবারের রাজনীতি। জাতীয় পাটিকে আজ এমপি বানিয়েছেন হাসনাত পরিবার। আজ এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার এখানে থাকার দরকার ছিল।
তিনি আরো বলেন, কর্মী ছাড়া নেতার দাম নেই।
সোনারগাঁয়ের মাটিতে আমি রক্ত ঝরিয়েছি। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুখে এক রকম বাহিরে আরেক রকম না বলে মুজিবের আদর্শ নিয়ে সোনারগাঁয়ে নৌকার প্রার্থী দিবেন।

আইভি বলেন, এক নেতার এক দেশ নারায়ণগঞ্জ। সাজেদ আলী মোক্তার, হাসনাত পরিবার, পরিক্ষিত আওয়ামীলীগার। বঙ্গবন্ধু নারায়ণগঞ্জে প্রথম আওয়ামীলীগের মিটিং করেন। আমি আশা করব সোনারগাঁয়ে পরিক্ষীত নেতাকর্মীরা কমিটিতে আসবে। জাতীয় পাটি এখানে সংসদ সদসস্য এটা মেনে নেয়া যায় না। সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সব ভাই ভেসে যাবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে। অমুক ভাই তমুক ভাই, ভাইলীগ বাদ দেন।

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল আউয়াল শামীম বলেন, ২৫ বছর অনেক ক্ষতি হয়েছে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের। খুব কষ্ট হয় ১৮ বছরের ভোটারদের কথা ভেবে।

আমরা শুধু শেখ হাসিনার কথায় চলব। আমিও চাই সোনারগায়েঁ নৌকা। আমরা সবাই যদি এমপি হই আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে পারল না, তাহলে কোন লাভ নাই। আমার আত্মীয় যেই হোক শেখ হাসিনা যা বলেন তাই হবে। ঐক্য মতের সরকারের কারনে আওয়ামী লীগ আজ জাতীয় পার্টির এমপি এখানে। যত বিভেদই থাকুক নারায়ণগঞ্জে জোহা পরিবার আর চুনকা পরিবার ছাড়া আওয়ামী লীগ হবে না। পূর্বশর্ত হলো দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে হবে। নিজেদের সার্থে ও শেখ হাসিনার সার্থে।

শনিবার সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলনে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ওমর ফারুক পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। গীতা পাঠ করেন অধ্যাপক মনোজ কুমার অধিকারী। পরে সোনারগাঁ উপজেলা শিল্পলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়।